wikipedia
wikipedia
ইসলামে নারীর
অধিকার :
মুসলমানদের
বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম হল তাঁদের জন্য আল্লাহর প্রেরিত জীবন বিধান। ইসলামে নারীর
অধিকার নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া :
“
|
"হে নবী, বলুন আপনার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে এবং
বিশ্বাসী নারীদেরকে যে, তাঁরা যেন তাঁদের বহিরাবরণ পরে থাকে (যখন বাইরে যাবে)।
এটা তাঁদের পরিচিতির অত্যন্ত উপযোগী। (তাঁরা যেন পরিচিত হয় বিশ্বাসী নারী
হিসেবে) তাহলে আর অহেতুক উৎপিড়ীত হবে না। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল
দয়াবান।"৩৩:৫৯[1]
|
”
|
সাধারণত ইসলাম
সর্বাবস্থায় নারীদের
ঘরে আবদ্ধ করে রাখার কথা বলে না। এ
সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
“
|
”
|
তবে, সেক্ষেত্রে দূর
যাত্রা হলে সাথে মাহ্রম
নিতে হবে। মাহ্রম
হল সাথে কোনো পুরুষ অভিভাবক থাকা। এ
সম্পর্কে সহীহ বোখারী
শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“
|
"রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন, মাহ্রমের
উপস্থিতি ব্যতীত কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি
ওঠে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার স্ত্রী হজ্বে
বেরিয়ে গেছে। এবং অমুক অমুক জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা
হয়েছে। নবী (সাঃ) বললেন, ফিরে যাও এবং
স্ত্রীর সাথে হজ্ব সমাপন কর।"৪৮৫৭[2]
|
”
|
পর্দা
ইসলামী শরীয়তের
পরিভাষায়, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ উভয়েরই
তাঁদের নিজ নিজ রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্যকে একে অপরের চোখ থেকে আড়ালে রাখার জন্য
ইসলামে যে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে, তাকে হিজাব বা
পর্দা বলা হয়।[1]}} ইসলাম
মুসলমান
নারী এবং
পুরুষ
উভয়ের ওপর পর্দা ফরজ করে দিয়েছে। এ সম্পর্কে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র
কোরআনের সূরা নূরে বলা হয়েছে,
“
|
"প্রত্যেক বিশ্বাসী পুরুষদের বল, তাঁরা যেন
তাঁদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে। এবং তাঁদের লজ্জাস্থান সমূহ হেফাজত করে। এটাই তাঁদের
জন্য উত্তম পন্থা। আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত। এবং বিশ্বাসী
নারীদেরকে বল, তাঁরা যেন তাঁদের দৃষ্টি অবনত রাখে। এবং তাঁদের লজ্জাস্থান
সমূহের সংযত সংরক্ষণ করে এবং তাঁদের দৈহিক সৌন্দর্য ও অলংকারের প্রদর্শনী না
করে। তবে, অনিবার্য ভাবে যা উন্মুক্ত থাকে (তাতে কোনো দোষ নেই)।
তাঁরা যেন তাঁদের বক্ষের ওপরে চাদর ঝুলিয়ে দেয় এবং তাঁদের স্বামী, তাঁদের পিতা, শ্বশুর এবং
সন্তানদের ছাড়া তাঁদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।"২৪:৩০-৩১[1]
|
”
|
ইসলামের গবেষকরা
এই আয়াত সমূহ এবং এ সংক্রান্ত হাদিসের
ওপর ভিত্তি করে, নারী-পুরুষের পর্দার একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে পুরুষের
জন্য বাধ্যতামূলক হল, কমপক্ষে নাভী থেকে
হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা। আর
নারীর
জন্য বাধ্যতামূলক হল, কমপক্ষে দুই হাতের
কব্জী এবং মূখ মন্ডল ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখা। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, তাও ঢেকে রাখতে
হবে। এছাড়া পর্দার বাকি শর্তগুলো হল: পরিধেয় পোশাক ঢিলেঢালা
হবে। যেন দেহের মূল কাঠামো প্রকাশ না পায়। পোশাক এত পাতলা ও স্বচ্ছ হবে না, যাতে ভেতরটা দেখা
যায়। পোশাক বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করার মত আকর্ষণীয় হবে না। পোশাকের ধরন বিপরীত
লিঙ্গের মত হবে না। এবং পোশাকের ধরন অবিশ্বাসীদের মত হবে না। এই শর্তগুলো
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই রকম।
উত্তরাধিকার
“
|
"তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিধান
দিচ্ছেন: পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান হবে। যদি দুই জনের বেশি নারী হয়, তাহলে সম্পদের
দুই তৃতীয়াংশ দেয়া হবে। আর একজন নারী হলে মোট সম্পদের অর্ধেক পাবে। মৃত
ব্যক্তির সন্তান থাকলে, তাঁর পিতা-মাতা প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে। আর
সে যদি নিঃসন্তান হয়, পিতা-মাতাই হয় উত্তরাধিকারী, তাহলে মাকে
দেয়া হবে তিন ভাগের একভাগ। মৃতের ভাই বোন থাকলে মা সেই ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে।
এসব বণ্টন মৃতের কোনো অসীয়ত থাকলে,
তা এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করার পরে।
তোমাদের পিতা-মাতা এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততী,
তোমাদের জানা নাই এঁদের মধ্যে তোমাদের
কল্যাণের দিক দিয়ে কারা ঘনিষ্টতর। এই বণ্টন ব্যবস্থা ফরজ করে দেয়া হয়েছে
আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ তো সব কিছুর ব্যপারেই পূর্ণ অবহিত এবং তিনিই হচ্ছেন
বিজ্ঞ, পরম কুশলী। আর তোমাদের স্ত্রীরা যা কিছু রেখে গেছে, তার অর্ধেক
তোমরা পাবে যদি তাঁরা নিঃসন্তান হয়। সন্তান থাকলে তোমরা পাবে ত্যক্ত সম্পত্তির
চার ভাগের একভাগ। তাঁদের করে যাওয়া অসীয়ত এবং দেনা থাকলে, তা সব আদায়ের
পর। আর তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের তাঁরা পাবে চারভাগের একভাগ, যদি তোমাদের
কোনো সন্তান না থাকে। সন্তান থাকলে তাঁরা পাবে আট ভাগের একভাগ। তাও কার্যকর হবে
তোমাদের কোনো অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা আদায়ের পর। আর যদি এমন কোনো পুরুষ অথবা
স্ত্রীলোক, যাঁর না আছে কোনো সন্তান,
আর না আছে পিতা-মাতা। আছে এক ভাই অথবা
এক বোন তাহলে তাঁদের প্রত্যেকে পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। আর ভাই বোন যদি দুই এর
বেশি হয়, তাহলে তাঁরা সবাই মিলে মোট সম্পদের তিন ভাগের একভাগ পাবে।
তাও কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায়ের পর। কোনোভাবেই কারো কোনো ক্ষতি করা বা
হতে দেয়া যাবে না। (এসব কিছু) আল্লাহর দেয়া উপদেশ মালা। আর আল্লাহ সব কিছুর
ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং পরম ধৈর্য্যশীল।"৪:১১-১২[1]
|
”
|
এবং
“
|
"তাঁরা আপনার কাছে ফতোয়া জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ
তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন, নিঃসন্তান ও পিতৃ-মাতৃহীন মৃত ব্যক্তির
সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে। যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়,
যাঁর কোনো সন্তান নেই, আছে এক বোন।
তাহলে সে পাবে সম্পদের অর্ধেক আর যদি বোন মারা যায় তাহলে ভাই পুরো সম্পদের
উত্তরাধিকারী হবে। মৃতের উত্তরাধিকারী যদি দুই বোন হয়, তাহলে ত্যক্ত
সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ তাঁরা পাবে। আর যদি কয়েকজন ভাই-বোন হয়, তাহলে পুরুষেরা
পাবে দুই ভাগ, আর নারীরা পাবে এক ভাগ। আল্লাহ স্পষ্ট করে দিচ্ছেন
তোমাদের জন্য যেন তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে না যাও। প্রত্যেকটি জিনিস
সম্পর্কেই আল্লাহ পূর্ণ অবহিত।"৪:১৭৬[1]
|
”
|
আয়াতত্রয়ীর
বর্ণনা মতে, ত্যক্ত সম্পত্তির বণ্টনের বেলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে
নারী-পুরুষ দুজনেই সমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে। তবে, বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই পুরুষ এগিয়ে।
সাক্ষী
ইসলাম
সমাজে নারী এবং
পুরুষের
প্রকৃতি এবং ভূমিকার পার্থক্যের ভিত্তিতে
সাক্ষী দানের ক্ষেত্রে আলাদা মানদন্ড নির্ধারণ করেছে। লিঙ্গ বৈষম্য এক্ষেত্রে
বিবেচ্য নয়।
মুসলমানদের কাছে
তাঁদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ
কোরআনের
পরই নির্দেশনার জন্য মূল্যবান যে উৎস, তা হচ্ছে
হাদিসগ্রন্থ। তাতে হযরত আবু হুরায়রা
(রাঃ) সর্বাধিক ৫৩৭৪ টি হাদিস বর্ণনা
করেছেন। আর তাঁর বর্ণিত হাদিস সমূহ শুধুমাত্র তাঁর একক স্বাক্ষীর ওপরেই বিশুদ্ধতার
সকল বিবেচনায় উত্তীর্ণ।[2]}} আবার হাদিসগ্রন্থ সমূহের মধ্যে হযরত আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০
টি। যা সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তিনি একজন নারী। আর তাঁর
বর্ণিত হাদিস সমূহও শুধুমাত্র তাঁর একক সাক্ষ্যের ওপরেই বিশুদ্ধতার সকল বিবেচনায়
উত্তীর্ণ।[2]}} এক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোনো পার্থক্য নেই। ঘটনার প্রকৃতি ও
ভূমিকা ঠিক থাকলে, ইসলামে একজন নারী সাক্ষীই যথেষ্ট। ইসলামী আইন-শাস্ত্রবীদগণের
অনেকেই এ ব্যাপারে একমত, যে চাঁদ দেখার
ব্যপারে একজন বিশ্বাসী নারীর সাক্ষীই যথেষ্ট। তবে,
ঘটনার প্রকৃতি এবং ভূমিকা বদলে গেলে
সাক্ষীর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের
পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে যায়।মুসলমানদের
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে
সূরা বাক্বারায়
বলা হয়েছে,
“
|
"হে ঈমানদারগণ,
যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তোমরা একে
অপরের সাথে লেনদেন কর, তাহলে তা লিখে নিয়ো। অতঃপর তোমাদের নিজেদের মধ্যের দুজন
পুরুষকে সাক্ষী বানাও। তখন যদি দুজন পুরুষের আয়োজন না করা যায়, তাহলে একজন
পুরুষ এবং যাঁদের সাক্ষীর ব্যপারে তোমরা আস্থাশীল এমন দুজন নারী বেঁচে নাও। যেন, একজন ভুল করলে
অন্যজন স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।"২৮২[1]
|
”
|
সাধারণত ইসলাম
পর্দার
বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তাই ইসলাম
নারীদের
ওপর কোনো আর্থিক
বাধ্যবাধকতা বা দায়দায়িত্ব আরোপ করেনি।
যেসব ক্ষেত্রে ঘটনার প্রকৃতি
আর্থিক
এর মত (ইসলামী মতে যা অধিক পুরুষ
সংশ্লিষ্ট) সেসব ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষ সাক্ষীর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিয়ে
ইসলাম ধর্ম
অনুসারে নারীরা
এক সাথে একাধিক স্বামী
গ্রহণ করতে পারবে না। তবে, একাধিক নারী এক সাথে একজন
পুরুষের
সাথে বিবাহে
আবদ্ধ হতে পারবে।"৪৭০৩[2]}} তবে, পুরুষদের মতই একজন নারী তার পছন্দের সৎপুরুষের কাছে নিজেকে
বিয়ের জন্য পেশ করতে পারবে।"৪৭০৩[2]}} কোনো অভিভাবক বা পুরুষ কোনো বিধবা অথবা কুমারী মহিলাকে তাঁর
অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করতে বা দিতে পারবে না।"৪৭৬৪[2]}} এমনকি নারীর অণুমতি ব্যতীত অভিভাবক তাঁকে বিয়ে দিলে তা
বাতিল করা যাবে। এ সম্পর্কে হযরত খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়া (রাঃ) থেকে
বর্ণিত,
“
|
"যখন তিনি বয়স্কা ছিলেন তখন তাঁর পিতা তাঁকে বিয়ে দেন। এ
বিয়ে তাঁর পছন্দ ছিল না। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে গেলে তিনি তা বাতিল
করে দেন।"৪৭৬৬[2]
|
”
|
তথ্যসূত্র
1.
1 2 3 4 5 পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অণুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর)। খাদেমুল-হারমাইন বাদশাহ ফাহদ,
কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প। ১৪১৩ হিজরী। পৃ: ১৪৮০ পাতা।
2.
1 2 3 4 5 6 7 8 সহীহ বোখারী শরীফ [১ম হইতে ১০ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত]
অণুবাদ: শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ আজীজুল হক। আলহাজ্ব মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, একুশে বই মেলা।
২০০৬ সন। পৃ: ১১২০ পাতা।

No comments